করোনা পজিটিভ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আক্রান্ত নার্সের ২১ মাসের সন্তান, ভরতি কোভিড হাসপাতালে
ফের উত্তরে বাড়ল করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা। এবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের করোনা সংক্রমিত নার্সের ২১ মাসের শিশুর শরীরেও মিলল করোনার জীবাণু। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই করোনা আক্রান্ত ওই নার্সের সন্তানের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে দেখা যায় তা পজিটিভ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে চিকিৎসকমহল। অন্যদিকে, এদিন করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দপ্তরের উত্তরবঙ্গের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি চিকিৎসক সুশান্ত রায়, দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার, অধ্যক্ষ প্রবীর দেব, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক পুন্নমবলম এস-সহ অন্যান্যরা।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আইসোলেশন এবং রেসপিরেটরি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে কর্মরত ছিলেন আক্রান্ত নার্স। ১৪ এপ্রিল জানা যায়, তিনিও করোনা আক্রান্ত। ১৬ এপ্রিল ওই নার্সের স্বামী এবং ১৭ এপ্রিল তার শাশুড়িও করোনায় সংক্রমিত হন। কিন্তু সেই সময় নার্স দম্পতির শিশুটি করোনায় সংক্রমিত ছিল না। পরিবারের সবাই করোনায় সংক্রমিত হওয়ার জন্য ওই শিশুটিকে দেখাশোনা কেউ না ছিল না। ফলে তাকেও সংক্রমিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই কোভিড হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। এরপরই এদিন সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ওই শিশুটিরও লালা রস সংগ্রহ করে সোয়াব টেস্ট করা হলে প্রত্যেকের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। নার্স পরিবারের তিন সদস্যের পাশাপাশি আরও এক নার্স করোনায় সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারও এদিন রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এছাড়াও মাটিগাড়ার কোভিড হাসপাতালের পাঁচ নার্স এবং জলপাইগুড়ির তিন জনের এদিন লালারস পরীক্ষা করা হয়। তাঁদের প্রত্যেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। নার্সের পরিবারের প্রত্যেকে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার পর নার্সের ঠিকনিকাটার আবাসন এবং আবাসন সংলগ্ন এলাকাকে কনটেইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার বলেন, “শিশুটির এদিন লালারসের পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এছাড়াও পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের পজিটিভ এসেছে। তবে চিন্তার এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও কারণ নেই। চিকিৎসা চলছে।” করোনা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গের বিশেষ আধিকারিক চিকিৎসক সুশান্ত রায় বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ভাইরাস রিসার্চ এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে লালারসের পরীক্ষার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বলা হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তা লাগু করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন জেলার করোনা প্রবণ এলাকায় ব়্যাপিড টেস্টের জন্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসা কর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি থেকে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।” দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, “কনটেইনমেন্ট জোনগুলির পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদেরও লালারসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।”
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে একজন, রেসপিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে একজন এবং বিশেষ আইসোলেশন বিভাগে দুজন শিশু বর্তমানে করোনা সন্দেহে ভরতি রয়েছে। এছাড়া শিলিগুড়ি সংলগ্ন কাওয়াখালী কবির হাসপাতলে ১৫ জন করোনা সন্দেহ ভরতি রয়েছে। বৃহস্পতিবার সেইসব রোগীর লালারসের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া দার্জিলিং জেলার চারটি কোয়ারেন্টাইনে মোট ৬০ জন পর্যবেক্ষণে রয়েছে। অন্যদিকে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের ভাইরাস রিসার্চ এন্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে এখন প্রতিদিন গড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টি করে লালারসের পরীক্ষা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে সেটি বাড়িয়ে ২৫০ থেকে ২৬০ টি করতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য এখন থেকে নমুনা বাড়ি বাড়ি থেকে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, জেলার প্রতিটি ব্লক এবং শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকায় একজন করে মনিটরিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে।
এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়