‘আমরা করব জয়’, গৃহবন্দিদের গানে একটুকরো ইটালি হয়ে উঠল কলকাতার বো ব্যারাক
কলকাতা: বিলেত নয়, তবে বিলেতি হাবেভাবে উৎসবের মেজাজে এখানে মাতে ‘অ্যানারা’। সাধ করে অনেকে ডাকেন অ্যাংলোপাড়া। সুখে-দুঃখে সবেতেই পাড়ার সারি সারি লাল বাড়িগুলো যেন পরস্পরের সঙ্গে অনবরত কথা বলে চলে। বো ব্যারাক, তিলোত্তমা কলকাতার মাঝে এক টুকরো বিলেতিপাড়া। রুশ বিপ্লবের এক সাক্ষীর ঠিকানাও কিন্তু এখন এই বো ব্যারাকই। অনেকের কলেজজীবনের আড্ডাস্থল। পোশাকি ভাষায় ‘আড্ডা-জয়েন্ট’। কিন্তু এখন সেই ঠেকগুলো ফাঁকা। সারি ধরা লালবাড়িগুলোর মাঝের রাস্তাও নিঝুম। কারণ? ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নরখেকো একটা জীবাণু! যার নাম করোনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই নিঝুমপাড়াটাই হয়ে উঠল রিহার্সাল রুম। যেন একটা উৎসবের আয়োজন চলছে। নিজের নিজের ব্যালকনি থেকেই বো ব্যারাক বাসিন্দারা গেয়ে উঠলেন ‘উই শ্যাল ওভার কাম’ (We Shall Over Come)। ঠিক যেন একটুকরো ইটালি। ঠিক যেমনটা ও দেশের সরকারের নির্দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষগুলো একে অপরকে সাহস জোগাতে গেয়ে উঠেছিল ‘ও ডে টু জয়’।
বৃহস্পতিবার বিকেল হতেই ইটালির সেই ঘরবন্দি মানুষগুলির মতো বউবাজার এলাকার এই ছোট্ট অ্যাংলো পাড়াটিও করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতার মনোবল বাড়াতে গেয়ে উঠল ‘উই শ্যাল ওভার কাম’। আগামী তিন সপ্তাহের জন্য গোটা দেশ লকডাউন। অতঃপর কর্মব্যস্ত মানুষ গৃহবন্দি থেকে ইতিমধ্যেই বিষাদগ্রস্থ। তবে ওই করোনা নামক নরখেকো জীবাণুর আতঙ্ক যতই ঘিরে থাকুক, মানুষ কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ভোলে না। স্বপ্ন দেখে সুদিনের। গানের ভাষায় বললে, “সুদিন আসবে বলে তাই, স্বপ্ন দেখে যাই…।” বো ব্যারাকের ওই লাল সারি ধরা বাড়িগুলোই যেন কল্লোলিনী কলকাতাকে নতুন করে স্বপ্ন করে দেখাল। এই কঠিন পরিস্থিতির মাঝেও দেখালো আশার আলো।
হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড। ‘তাতে লেখা সোশ্যাল ডিসট্যান্স’। প্রত্যেক ব্যালকনিতেই দাঁড়ানো একেকজন। কারও হাতে গিটার। কেউ বা গানের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে দিচ্ছেন করতালি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেও বুঝিয়ে দিল যে এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁরা একত্রিত। এভাবেই সরকারের ডাকে সারা দিয়ে গৃহবন্দি থেকে লড়ে যাবে করোনা শত্রুর সঙ্গে।
ওরা কেউ অবাঙালি কিংবা খ্রীস্টান নয়, বরং আজ ওদের সবার ধর্ম ‘মানবতা’। আর সেই মানবতারই জয়গান গাইল ওরা। বুঝিয়ে দিল কল্লোলিনী কলকাতা ‘সিটি অফ জয়’-এর স্পিরিটটা কিন্তু গৃহবন্দি থেকেও থিতিয়ে যায়নি। এমনকী, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক পুলিশ সার্জেন্টকে দেখেও অভিবাদন জানাল। শ্রদ্ধা জানাল সেসব উর্দিধারী কিংবা উর্দিবিহীন মানুষগুলোকে, যাঁরা দিনরাত এক করে করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাই বোধহয় কথায় বলে, একচিলতে কুঠুরিতে থেকেও স্বপ্ন দেখা যায়। স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরক হওয়া যায়। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ইটালির মানুষগুলির মতো এদিন বো ব্যারাকবাসীরাও মুক্তির আস্বাদ নিল নিজেদের ব্যালকনি থেকে।
এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়