কতটা শেখাচ্ছে অনলাইন ক্লাস, সমীক্ষায় প্রশ্ন



কতটা শেখাচ্ছে অনলাইন ক্লাস, সমীক্ষায় প্রশ্ন




হাইলাইটস




  • অনলাইনে পড়াশোনার সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পড়ুয়াদের

  • যোগাযোগ বা তথ্যের আদানপ্রদান ঠিকঠাক হচ্ছে কি না,

  • তা নিয়ে কোনও মতামত দিতে পারেনি ২৬.১ শতাংশ পড়ুয়া।

  • এই ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ও খুব অসন্তুষ্ট ১৭.৪ শতাংশ পড়ুয়া।





অভিভাবকদের মতটা সংক্ষিপ্ত অথচ সুনির্দিষ্ট। তাঁরা বলছেন, ‘সিলেবাস এগোচ্ছে, শিক্ষা নয়!’




লকডাউনে ক্লাসরুম তালাবন্ধ থাকায় বাড়িতে বসে অনলাইন পড়াশোনায় বেসরকারি স্কুলের বহু পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকরা সন্তুষ্ট। তবে ছেলেমেয়েরা এই নতুন আঙ্গিকে পড়াশোনা সত্যিই কতটা বুঝতে পারছে অথবা কতটা ঠিকঠাক শিখছে, তা নিয়ে প্রবল ধন্দে মা-বাবারা।




লকডাউন পর্বে ৩ থেকে ১৭ এপ্রিল কলকাতার নাম করা ৩৫টি ও ব্যারাকপুর, চুঁচুড়া, বোলপুর ও মালদার চারটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ৫ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী পড়ুয়াদের মধ্যে অনলাইন সমীক্ষা করা হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনের অধ্যাপিকা সুদেষ্ণা লাহিড়ীর করা এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, অনলাইন ক্লাসে ৭৩.৯ শতাংশ পড়ুয়া সন্তুষ্ট, খুব সন্তুষ্ট ৮.৭ শতাংশ। তবে অনলাইনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ভাবনার আদান-প্রদান ও পঠনপাঠনের মান নিয়ে পড়ুয়া ও তাদের মা-বাবারা দ্বিধায়।




অনলাইনে পড়াশোনার সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পড়ুয়াদের যোগাযোগ বা তথ্যের আদানপ্রদান ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে কোনও মতামত দিতে পারেনি ২৬.১ শতাংশ পড়ুয়া। এই ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ও খুব অসন্তুষ্ট ১৭.৪ শতাংশ পড়ুয়া। আবার পড়ুয়াদের মধ্যে এই নিয়ে সন্তুষ্ট ৪৭.৮ শতাংশ। অনলাইন প্রশ্নোত্তরের সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহজেই পাওয়া যাচ্ছে, এমনটা জানাচ্ছে পড়ুয়াদের ৪৩.৫ শতাংশ। কিন্তু ২৬ শতাংশ পড়ুয়া জানাচ্ছে, তারা ওই সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহায়তা সহজে পাচ্ছে না। আবার এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তই জানাতে পারেনি ২১.৭ শতাংশ পড়ুয়া। সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, অনলাইনে পড়ুয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়ক হচ্ছেন ও দ্রুত সাড়া দিচ্ছেন ৪৩ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা। তা ছাড়া, অনলাইন পঠনপাঠনে ৬০ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা পড়ুয়াদের সঠিক ভাবে উৎসাহ ও পরামর্শ দিতে পারছেন, এমনটাও জানা যাচ্ছে সমীক্ষায়।




আবার শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে বেশ কিছু বাস্তব সত্যও। যেমন, ক্লাসে পাঠদানের সম্পূর্ণ বিপরীত হল ভার্চুয়াল পদ্ধতি। এতদিন পড়ুয়াদের সঙ্গে সরাসরি বা সামনাসামনি পড়াশোনায় তাঁরা যতটা স্বাভাবিক ছিলেন, হঠাৎ অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষাদানে তাঁরা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। বহু শিক্ষকই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে সড়গড় নন। স্কুলে পড়ানোর আগে তাঁরা বাড়িতে প্রস্তুতি নিয়ে আসতেন। এমনটাই তাঁরা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু অনলাইন ক্লাসের আগাম কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই আচমকাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ এই পদ্ধতিতে পড়াতে গিয়ে অসুবিধের মুখে পড়ছেন।




ক্যালকাটা বয়েজ স্কুলের প্রিন্সিপাল রাজা ম্যাকগির কথায়, ‘অনলাইনে পড়ুয়াদের আমরা একশো শতাংশ শিক্ষা দিতে পারি না। এতে শুধু থিয়োরি পেপার পড়ানো সম্ভব। কিন্তু নবম শ্রেণি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে হাতে-কলমে শিক্ষাদান হয়।’ তাঁর বক্তব্য, ‘এতদিনের টানা ছুটিতে ওরা যাতে পড়াশোনায় খেই হারিয়ে না-ফেলে, সেই জন্যই অনলাইন ভরসা।’




দিল্লি পাবলিক স্কুল নর্থ কলকাতার এক ছাত্রীর মা কোয়েলি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘অনলাইন ক্লাসে ইতিবাচক দিকের তুলনায় নেতিবাচক দিকই বেশি। টানা পাঁচ ঘণ্টার ক্লাসে বার বার নেটওয়ার্ক প্রবলেম হচ্ছে। বাচ্চাদের ধৈর্যের ব্যাঘাত ঘটছে। এতে চোখেরও ক্ষতি।’ তিনি মনে করেন, ‘স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা থাকে, প্রযুক্তির মাধ্যমে তা কখনও সম্ভব নয়।’




আইসিএসই স্কুলগুলোর সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি সুজয় বিশ্বাস সমীক্ষার সঙ্গে একমত। তাঁর বক্তব্য, ‘অনলাইনে পঠনপাঠন কখওন স্কুলের ক্লাসরুমে পড়ার বিকল্প হতে পারে না। স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে এই ব্যবস্থা। স্কুলে শিক্ষক-পড়ুয়ার উপস্থিতিতে শিক্ষার গভীরতা বাড়িতে বসে সম্ভব নয়। এতে মনের বিকাশও ঘটছে না।’





এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়


Source : BanglaSonbad


নবীনতর পূর্বতন