লকডাউনে চোর-পুলিশ খেলা, পাড়ার মোড়ের জটলা ভাঙতে আকাশে উড়ল ড্রোন



লকডাউনে চোর-পুলিশ খেলা, পাড়ার মোড়ের জটলা ভাঙতে আকাশে উড়ল ড্রোন




 ঠিক যেন ‘চোর-পুলিশের’ খেলা। খেলাই বটে! ‘চোর’ ধরতে লাঠি উঁচিয়ে পিছে ধাওয়া পুলিশের। আর পুলিশ দেখেই দে ছুট। এদিক-সেদিক লুকিয়ে পড়া। ‘চোর’ মানে লকডাউন ভাঙা আড্ডাবাজ বাঙালি। কবজায় না পেয়ে শেষমেষ রণে ভঙ্গ পুলিশের। আর পুলিশ ফেরামাত্রই ফের যে কে সেই। করোনা আতঙ্কে ভীত না হয়ে ভেতো বাঙালি আবার মশগুল আড্ডা, হাসি আর ঠাট্টাতেই। এটাই এখন রোজনামচা ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ এলাকার বাসিন্দা আর পুলিশকর্মীদের। এবার তাই আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হল বাধ্য হল পুলিশ। আকাশে উড়ল ড্রোন।




পাড়ায়, রাস্তার মোড়ে আড্ডার যেন অন্ত নেই। চলছে গুরুগম্ভীর সব আলোচনা। লকডাউনকে থোড়াই কেয়ার। বিষয়বস্তু কিন্তু সেই করোনা ভাইরাস। কতই না কাটাছেঁড়া তাকে নিয়ে। এমনকি করোনা ঠেকাতে লকডাউনই যে একমাত্র উপায়, তাতেও সায় দিচ্ছে বেশিরভাগই। মজার ব্যাপার এই আলোচনা চলছে লকডাউনকে উপেক্ষা করেই। যেমন মহেশতলার আকড়া স্টেশন রোড। দেখে বোঝার জো নেই এখন লকডাউন। গায়ে গা ঠেকিয়ে দোকান, বাজারে কেনাকাটা। মাস্ক না পরে মোটরবাইকে চেপে অকারণ ঘুরে বেড়ানো। হিরো সাজার এক অদ্ভুত প্রবণতা। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কে কিভাবে পালিয়ে বাঁচল আর কে ধরা পড়ে গেল চলছে তারই চুলচেরা বিশ্লেষণ। অথচ এই মহেশতলাতেই মিলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান। তা নিয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই কারও।




জেলা পুলিশের বিভিন্ন থানা এলাকায় করোনা সতর্কতায় প্রশাসনের হাজারও প্রচার ফুৎকারে উধাও। আড্ডাপ্রিয় বাঙালির চ্যালেঞ্জ করোনাকেও। ‘কিস্যু হবে না’ গোছের ভাবখানা। যেমন চলছে আড্ডা তেমনই ছুটছে মোটরবাইক। কারুর প্রেস, কারুর বাইকে আবার পুলিশের স্টিকার সাঁটানো। বাজারগুলোতে একে অপরের ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলছে। আলু, পিঁয়াজ কিনতে ভিড়। ভিড় মাছ, মাংসের দোকানে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে একটাই আলোচনা, ‘করোনা’। তবে নজর কিন্তু সবারই রাস্তায়। পুলিশের গাড়ি আসতে দেখলেই দে ছুট। একটু আড়াল খোঁজার চেষ্টা। পুলিশ চলে গেলেই ফের জটলা। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পেরে অনেকেরই মুখেচোখে তখন বিজয়ীর হাসি। ছাতি ফোলানো আস্ফালন। পুলিশি নজর এড়াতে ব্যর্থ যারা তাদেরই কপালে জুটছে হাজতবাস কখনও বা কান ধরে ওঠবোস। মাঝেমধ্যে লাঠির দু-এক ঘা পড়ছেও বটে এ পিঠে, ও পিঠে। এমনই দৃশ্য বজবজ, ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, মগরাহাট, উস্তি, মহেশতলা, বিষ্ণুপুরে।




যা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা পুলিশের পক্ষেও কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠছে। আইনভঙ্গকারীদের জব্দ করতে তাই এবার ড্রোন ক্যামেরার সাহায্য নিল পুলিশ। বিষ্ণুপুর, মহেশতলা, ডায়মন্ড হারবারে শনিবার সকাল থেকেই আকাশে উড়ছে ড্রোন। উড়ন্ত ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি দেখে তৎক্ষণাৎ সেই এলাকায় চলছে পুলিশি হানা। ধরা পড়া আইনভঙ্গকারীদের কোথাও পুলিশের ধমকানি, কোথাও চমকানি। চলছে হাজতবাস, কান ধরে ওঠবোসের মত শাস্তিও। আর তাতেই কেল্লাফতে। আড্ডাবাজদের সহজেই ঘরবন্দি করতে কাজে লেগেছে এই প্রযুক্তি। লকডাউনের একমাস অতিক্রান্ত। তবু হুঁশ ফেরেনি বেশ কিছু মানুষের। “আদৌ ফিরবে কি? ভয়টা যে সেখানেই। সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়লে হুঁশ ফিরে আর কি লাভ,” প্রশ্ন জেলা পুলিশের এক কর্তার।






এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়



নবীনতর পূর্বতন