‘ভাইরাস হামলায় দুর্বল করা যাবে না ভারতীয় ফৌজকে’, বললেন প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান
বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা মহামারির মৃত্যুমিছিল। এই মারণ ভাইরাসের সামনে অসহায় আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশও। এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে চলছে ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র। মানববোমা নয়, এবার ভারতীয় ফৌজকে নিশান করেছে এমন এক আত্মঘাতী বাহিনী, যাদের শরীরে বইছে দুর্দম কোভিড-১৯ ভাইরাসের স্রোত। ‘সংবাদ প্রতিদিন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান অরূপ রাহা সাফ জানান, ভারতীয় সেনা এত ঠুনকো নয়। ভাইরাস হামলা চালিয়ে সেনাকে দুর্বল করা মুশকিল।
সম্প্রতি জানা গিয়েছে, প্রবল ছোঁয়াচে করোনা রোগকে শরীরে পুরে সীমান্তের ওপার থেকে কিছু লোক ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করছে। উদ্দেশ্য, জীবাণু ছড়িয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা। এ ব্যাপারে বিহারের পশ্চিম চম্পারণের জেলাশাসক ও এসএসপিকে সতর্ক করেছেন পানটোকার রামগারোয়া সীমা সুরক্ষা বল। নেপাল সীমান্তে নিয়োজিত এই বাহিনীর দাবি, সম্প্রতি প্রায় ৫০ জন করোনা পজিটিভ রোগীকে নেপাল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে সে চেষ্টা ভেস্তে দেওয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্রের অন্যতম চক্রীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। জালিম মুখিয়া নামে ওই ব্যক্তি ভারতে চোরাপথে অস্ত্র ও জাল নোট ঢোকানোর চেষ্টাও করছিল বলে এসএসবি-র দাবি। এই বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে, প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বলেন, “এই ধরনের সাবভার্সিব অ্যাক্টিভিটি বিদেশি শত্রুরা করতেই পারে। কিন্তু ভারতীয় সেনা এত ঠুনকো নয়। ভাইরাস হামলা করে সেনাকে দুর্বল করা মুশকিল। তবে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। কোথাও যেন এতটুকু ঢিলেমি না আসে।”
এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ মহল এই অনুপ্রবেশের পিছনে পড়শি রাষ্ট্রের বড় চক্রান্ত দেখছে। বিএসএফকে সতর্কও করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৃহস্পতিবার বিএসএফ কমান্ড ও সেক্টর হেড কোয়ার্টারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোকে কোভিড-১৯ অনুপ্রবেশ সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের বলা হয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ মাস্ক, স্যানিটাইজার, পরিস্রুত পানীয় জল, খাবার, ওষুধ বিলি করতে। উদ্দেশ্য একটাই, গ্রামবাসীদের অসচেতনতার কিংবা অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কেউ যেন ভাইরাস হামলা চালাতে না পারে।
হ্যা, এটাই সত্যি। কোভিড-হানার আশঙ্কায় ভারতীয় সেনা এই মুহূর্তে সদাসতর্ক। পড়শি দেশগুলি যাতে ছলে বলে কৌশলে ভারতীয় সেনাশিবিরে কোভিড ছড়াতে না পারে, সে দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হচ্ছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সংক্রমণের আশঙ্কায় ইতিমধ্যে ভারতীয় ফৌজের যাবতীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মুলতবি রাখা হয়েছে। সেনা ব্যারাকের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। বহিরাগত কাউকে ঢুকতে হলে এখন রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য জীবাণু আক্রমণ রুখতে সেনাছাউনিতে কর্মরত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরও ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেশন আনা থেকে সাফাইয়ের কাজ, সব এখন জওয়ানরা নিজেরাই করছেন। সেনার এই লৌহবাসরকে এতটাই বজ্র আঁটুনিতে ঘেরা হয়েছে যে, জওয়ানদেরও ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় জীবাণুনাশক মেশানো জলে স্নান করতে হচ্ছে। স্যানিটাইজ করা হচ্ছে বহিরাগতদের পোশাক। সঙ্গে একটি বাড়তি পোশাক রাখা হচ্ছে। সেটিও পরীক্ষা করা হচ্ছে। তার পরই অনুমতি মিলছে ভিতরে ঢোকার।
নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে কলকাতার ইস্টার্ন কমান্ড অফিসেও। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ফোর্ট উইলিয়াম ১ লক্ষ ‘এন-৯৫’ মাস্কের বরাত দিয়েছে। বরাত দেওয়া হয়েছে ‘পার্সোনাল প্রোটেকশন কিট’ (পিপিই)-রও। কোনওরকম ঝুঁকি নিতে রাজি নন পূর্বাঞ্চলের সেনাকর্তারা। এদিন ইস্টার্ন কমান্ডের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিককে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হয়। কিন্তু, তিনি ফোন ধরেননি। কর্নেল পদমর্যাদার এক অফিসার জানান, “কিছু জানার থাকলে মেল করুন।” প্রাক্তন মেজর জেনারেল অরুণ রায় অবশ্য একে ভাইরাস-হামলার চেষ্টা বলে মানতে নারাজ। তিনি জানালেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে যখন এসএসবি সতর্ক করেছে, তখন বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তবে, আমার মনে হয়, ভাল চিকিৎসার পাওয়ার জন্যই ওই করোনা সংক্রমিতরা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।”
এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়