করোনা চিকিৎসায় ‘আয়ুশ’কে মান্যতা কেন্দ্রের, আইসোলেশনে থাকা রোগীর উপর প্রয়োগ হবে আয়ুর্বেদ
এতদিন ছিল শুধু ভাইরাস প্রতিরোধের প্রোটোকল। এবার করোনা চিকিৎসায়ও ‘আয়ুশ’-এর দরজা খুলে দিল ভারত সরকার।
প্রাচীন ভারতের আয়ুর্বেদ শাস্ত্রকে ভর করেই নিজের দেশের কোভিড পজিটিভ রোগীদের সুস্থ করছে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা। এবার সেই পথে হাঁটল ভারতও। মান্যতা দিল সাড়ে তিন হাজার বছরের পুরনো শাস্ত্রকে। তবে শুধু আয়ুর্বেদ নয়, যোগবিজ্ঞান বা হোমিওপ্যাথির মতো আয়ুশের অন্য বিভাগগুলিকেও সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুশ মন্ত্রক এই মর্মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। যাতে বলা হয়, শুধুমাত্র করোনা প্রতিরোধই নয়, করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিৎসায়ও ‘আয়ুশ’ অর্থাৎ আয়ুর্বেদ, যোগ, ইউনানি, সিদ্ধ, হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যার অর্থ, এই সকল শাখার চিকিৎসকরা চাইলে এখন আইসোলশেন থাকা করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিৎসা করতে পারবেন।
২০১৯ সালের কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল’ আইন অনুযায়ী নোভেল করোনা রোগীর কোয়ারান্টাইনে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা ও গবেষণা করা যায় আয়ুশ পদ্ধতিতে। তা সে রোগীর শরীরে করোনার উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক! কেন্দ্রীয় সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশের পর এখন রাজ্যগুলি কী করে তা দেখার। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আর্য়ুবেদ চিকিৎসক পুলককান্তি কর বলেছেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের এমন নির্দেশিকা প্রকাশের পর আর্য়ুবেদ মতে কোভিড চিকিৎসায় আর কোনও বাধা রইল না। আমাদের আশা, রাজ্য আমাদের করোনা চিকিৎসায় যুক্ত করবে। গবেষণার নতুন দরজা খুলে দেবে।” একই বক্তব্য রাজ্যের আয়ুর্বেদ পরিষদের সহসভাপতি ডা. পি বি কর মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীকে বহুবার জানিয়েছি। কেরল, রাজস্থান, জম্মু কাশ্মীর, হরিয়ানা, গোয়া কেন্দ্রের প্রোটোকল মেনে আয়ুশ চিকিৎসকদের করোনা যুদ্ধে শামিল করেছে। পশ্চিমবঙ্গ কেন বাদ থাকবে? এরপরও যদি রাজ্য চুপ থাকে তবে কিন্তু আয়ুশ চিকিৎসকরা প্রবল হতাশ হয়ে পড়বেন।’’ নোভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও আক্রান্তদের চিকিৎসায় এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও পথ খুঁজে পায়নি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান।
এমন কঠিন সময়ে কিন্তু আশার আলো দেখিয়েছে ভারতের আর্য়ুবেদ চিকিৎসা। কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এমন সময়ে ভারতের প্রাচীন আর্য়ুবেদ শাস্ত্রের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। এই সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পত্রিকাগুলিতেও দেশের আর্য়ুবেদ শাস্ত্রের কার্যকর ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর্য়ুবেদের মতোই ইউনানি, সিদ্ধ এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমেও করোনা রোগীর চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’ কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব পি এন রাজকুমারের এদিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘১৯৪০ সালের ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিক্স আইন অনুযায়ী আয়ুশকে কার্যকর করা হবে।’
তবে যেসব সংস্থা আর্য়ুবেদ, ইউনানি বা হোমিওপ্যাথি মতে চিকিৎসা ও গবেষণা করবে, তাদের বেশ কিছু নিয়মও মানতে হবে বলে নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আয়ুশ মতেই চিকিৎসা করতে হবে। আইসিএমআর প্রকাশিত ন্যাশন্যাল এথিক্যাল গাইডলাইন এবং হেলথ গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা করতে হবে। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় একমাত্র অতি সংকটজনক করোনা রোগী ছাড়া বাকিদের আর্য়ুবেদিক ওষুধ প্রয়োগ করেই চিকিৎসা করা হচ্ছে।
এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়