গ্রিন জোনেরও সর্বত্র সব পরিষেবায় ছাড় মিলবে না
করোনা-সতর্কতার মধ্যেই রাজ্যে আরও বেশ কিছু পরিষেবায় ছাড় দেওয়া হবে বলে বুধবারই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে অরেঞ্জ জোন বা গ্রিন জোন বলে চিহ্নিত এলাকায় সর্বত্র এই সব পরিষেবায় ছাড় মিলবে, এমনটা নয়। তার আগে কোন জেলায় কোন কোন এলাকা কনটেনমেন্ট জোন হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, তা বিশদে খতিয়ে দেখবে রাজ্য। তার পরেই কোন এলাকায় কোন কোন পরিষেবায় ছাড় মিলবে, তা নিয়ে রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করবে।
আজ, শুক্রবার কোভিড-নাইনটিন নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্যের হাই-পাওয়ার কমিটিতে এই সব তথ্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তার পরেই এই নির্দেশিকা জারি হবে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, 'পরিষেবায় ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে শুধু দূর থেকে গ্রিন ডিসট্রিক্ট বললেই হবে না। কোথায় কোথায় কনটেনমেন্ট জোন আছে, সে সব দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।'
তবে কলকাতা এবং লাগোয়া দুই জেলা, হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। মুখ্যসচিব জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ৪৪৪। এর মধ্যে কলকাতায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ২৬৪, হাওড়ায় ৭২ এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৭০। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই তিন জেলায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হল, গত কয়েক দিন ধরে যাঁরা কোভিড-নাইনটিন পজিটিভ বলে চিহ্নিত হচ্ছেন, তাঁদের প্রায় ৮০ শতাংশই এই তিন জেলার। এই তিন জেলার বাইরে বাকি রাজ্যে কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা আপাতত ৩৮টি। ঘটনা হল, এদিনই আলিপুরদুয়ারে ৪ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। ফলে গ্রিন জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে গেল আলিপুরদুয়ার জেলা।
করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ও তার আশপাশের এলাকার জনঘনত্ব, বাজার ও বসতির অবস্থান, এই সব বিবেচনা করে কনটেনমেন্ট জোন নির্ধারণ করছে রাজ্য সরকার। তবে কলকাতা ও লাগোয়া দুই জেলায় কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেশি হলেও রাজ্য প্রশাসন যে ভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং লকডাউন কার্যকর করছে, তাতে সুফল মিলছে বলেও মুখ্যসচিব জানান। তিনি বলেন, 'রাজ্যের আটটি জেলা এখনও পর্যন্ত করোনা-মুক্ত। রেড জোনে রয়েছে কলকাতা-সহ চার জেলা। অরেঞ্জ জোনে যে ১১টি জেলা রয়েছে, তার মধ্যে দু'টি জেলায় গত ২৫ দিনে নতুন করে করোনা-পজিটিভ কেস আসেনি, তিনটি জেলায় ১২ দিনে এবং অন্য দু'টি জেলায় সাত দিনে নতুন কেস নেই।'
এই অবস্থায় কোন কোন এলাকায় কোন পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হবে, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অত্যন্ত সতর্ক ভাবে যাবতীয় তথ্য-পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখে পরিস্থিতি বিবেচনা করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিব জানান, কোন কোন এলাকায় দোকান খোলা যাবে, তা নিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে বিশদ ব্যাখ্যা এ দিনও মেলেনি। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের ডাকা ভিডিয়ো কনফারেন্সে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিব অংশ নেন। সেখানে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবও। রাজীব সিনহা বলেন, 'কেন্দ্রের তরফেও বলা হয়েছে, তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন তৈরি করছে। তাতে কিছুটা সময় লাগছে। ধাপে ধাপে গ্রিন, অরেঞ্জ ও রেড জোনে কী কী পরিষেবায় ছাড় দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
তবে সোমবার থেকে রাজ্যে কিছু কিছু পরিষেবায় ছাড় মিললেও কলকাতা এবং হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় এখনই ওই সব পরিষেবা চালু হচ্ছে না বলে বিভিন্ন মহলের ধারণা। কারণ, ওই তিনটি জায়গাতেই কোভিড-নাইনটিন আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি এবং সেখানে কনটেনমেন্ট জোনও বাড়ানো হচ্ছে। আবার শিল্প, বাজার, ব্যবসা, বিনোদনের মূল কেন্দ্রগুলোও মূলত রয়েছে এই তিনটি জেলায়। ফলে, রাজ্য সরকারকে এই দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে, রেড জোনের মধ্যে না-থাকলেও কোনও তল্লাট কনটেনমেন্ট জোনের মধ্যে বা তার লাগোয়া জায়গায় থাকলে সেখানে পরিষেবায় ছাড়ের ক্ষেত্রে কতটা সুবিধে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এখন বাংলা - Ekhon Bengla | খবরে থাকুন সবসময়
Source : BanglaSonbad