রথযাত্রা ও পুরীর জগন্নাথ ধামের প্রাচীন কাহিনি জানুন

রথযাত্রা ও পুরীর জগন্নাথ ধামের প্রাচীন কাহিনি জানুন

নিউজ ডেস্ক : কথিত আছে রথযাত্রা হল বড়ো ভাই বলরাম বা বলভদ্র ও বোন সুভদ্রাকে সঙ্গে করে নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনযাত্রার স্মারক। আবার পুরাণ অনুযায়ী কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের প্রাঙ্গণ থেকে শ্রীকৃষ্ণকে রথে করে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই প্রথম শুরু হয়েছিল রথযাত্রা।রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জগন্নাথ আর পুরীর জগ্ননাথ ধামের প্রাচীন কাহিনি। রথযাত্রার ইতিহাস হল কিংবদন্তি অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের পত্নী গুণ্ডিচা দেবীর বাড়ি যান। এটি জগন্নাথের মাসির বাড়ি। সাত দিন পরে সেখান থেকে আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। এইটিই সোজারথ ও উলটোরথ নামে পরিচিত। রথযাত্রা আবার পতিতপাবনযাত্রা, নবযাত্রা, গুণ্ডিচাযাত্রা, মহাবেদীযাত্রা, নন্দীঘোষযাত্রা নামেও পরিচিত। [ আরোও পড়ুন, ২৫০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম, ভক্ত ছাড়াই পথে পুরীর জগন্নাথদেবের রথ ]


জানা যায়, মালবরাজ ইন্দ্রদুম্ন্য ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। একদিন সন্ন্যাসীর কাছ থেকে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের নীল পর্বতে ভগবান বিষ্ণুর পূজার কথা জানতে পারেন। এখানে ভগবান বিষ্ণু গুপ্ত ভাবে শবরদের হাতে নীলমাধব রূপে পূজিত হন। শোনেন তাঁর মাহাত্ম্যের কথাও। রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য ভগবান নীলমাধবের সেই রূপ দর্শনে আকুল হয়ে উঠেন। রাজা তাঁর পুরোহিতের ভাই বিদ্যাপতিকে শবরদের রাজ্যে গিয়ে নীলমাধবের সন্ধান আনতে বলেন। বিদ্যাপতি শবরদের রাজা বিশ্বাবসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজা অতিথি আপ্যায়নের দায়িত্ব দেন কন্যা ললিতাকে। এ দিকে ক্রমে ললিতার প্রেমে পড়েন বিদ্যাপতি, ললিতা অন্তঃসত্ত্বা হন। ললিতা এ কথা বিদ্যাপতিকে জানান এবং তাঁকে বিবাহ করতে বলেন। বিদ্যাপতি ললিতাকে এর বিনিময়ে নীলমাধব দর্শন ইচ্ছার কথা বলেন।

বিদ্যাপতিকে দুই চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ অবস্থায় নিয়ে যেতে চান ললিতা। বিদ্যাপতি তাতেই রাজি হয়ে যান। কিন্তু বিদ্যাপতি সঙ্গে করে সরষে নিয়ে যান। সারা রাস্তায় তা ফেলতে ফেলতে যান। ললিতা এ সবের কিছুই জানতে পারেননি। বিদ্যাপতি নীলমাধবের মন্দিরে পৌঁছোন। কিন্তু নীলমাধব বিদ্যাপতির হাতের নাগাল থেকে অন্তর্ধান হন। পরে অবশ্য ললিতার সাহায্যে নীলমাধবের দর্শন লাভও করেন তিনি। তার পর রাজাকে সব কথা জানালে নীলমাধবের দর্শনে আসেন ইন্দ্রদুম্ন্য।

ইন্দ্রদুম্ন্য নীলমাধব দর্শন করতে গেলে নীলমাধবও অন্তর্ধান হয়ে যান। শোনা যায় বিশ্বাবসু তাঁকে লুকিয়ে রাখেন। রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য এতে খুব দুঃখ পেয়ে অনশনে প্রাণ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় দেবর্ষি নারদ মুনি বলেন, তাঁর দ্বারাই ভগবান জগন্নাথদেব দারুব্রহ্ম রূপে পূজা পাবেন। এ কথা শুনে রাজা শান্তি পান।
দারুব্রহ্মের সন্ধান পাওয়ার পর ভগবানের আদেশানুসারে শবর রাজ বিশ্বাবসু, বিদ্যাপতি ও রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য স্বর্ণরথ করে ওই দারুব্রহ্ম নিয়ে আসেন। ভগবানের আদেশেই পুরীর দৈতাপতিরা রথের সময় ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা আর সুদর্শনের সেবা করার অধিকার পান। এঁরা ব্রাহ্মণ বিদ্যাপতি এবং শবরকন্যা ললিতার বংশধর। নব-কলেবর যাত্রায় দৈতাপতিরা দারু অন্বেষণ এবং ব্রহ্ম পরিবর্তনের কাজ সমাপন করেন। নবকলেবরের পর পুরোনো বিগ্রহের পাতালীকরণের কাজ সমাপন করেন। একে বলে ‘কোইলি বৈকুন্ঠ’।সেই দারুব্রহ্ম থেকে নারদ মুনির পরামর্শে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ তৈরির জন্য অনেক ছুতোর কারিগরকে ডেকে পাঠান। কিন্তু কেউই কাজ করতে সমর্থ হল না। শেষে বিশ্বকর্মা এক ছুতোরের বেশে এসে মূর্তি তৈরিতে সম্মত হলেন। মতান্তরে এই ছুতোর ছিলেন ভগবান বিষ্ণু।
এই ছুতোরের নাম অনন্ত মহারাণা। তিনি একটি শর্তে মূর্তি গড়ার প্রস্তাবে রাজি হন। বড়ো ঘর ও ২১ দিন সময় চান মূর্তি গড়তে । ২১ দিন দরজা বন্ধ করে কাজও করবেন। বলা ছিল সে সময় কেউ যেন দরজা না খোলে।

তিনিই আগত অন্যান্য ছুতোরদের তিনটি রথ তৈরি করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ১৪ দিনের মাথায় মহারানি দরজা খুলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ ঘরেই অনন্ত মহারাণা অন্তর্হিত হন। অসম্পূর্ণ জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর মূর্তি দেখে রানি জ্ঞান হারান। বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য ভগবানের এই রূপ দেখে দুঃখিত হলেন। রাজাকে ভগবান বিষ্ণু আবার স্বপ্ন দিলেন। বলেন, তাঁর ইচ্ছায় দেবশিল্পী মূর্তি নির্মাণ করতে এসেছিলেন। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ হওয়াতে এই রূপ মূর্তি তৈরী হয়েছে। কিন্তু তিনি অসম্পূর্ণ বিকট মূর্তিতেই পূজা নেবেন। বলেন, রাজার ইচ্ছা হলে ঐশ্বর্য দ্বারা সোনা রূপার হাত পা নির্মিত করে সেবা করতে পারে। সেই থেকে উলটোরথের পর একাদশীর দিন তিন ঠাকুরের রাজবেশ হয় রথের ওপর।

স্বপ্নে রাজা ছদ্মবেশী অনন্ত মহারানার বংশধরেরাই যেন ভগবানের সেবায় রথ যুগ যুগ ধরে প্রস্তুত করতে পারে, সেই আশীর্বাদও চেয়েছিলেন। ভগবান নারায়ণ বলেন, পরম ভক্ত শবররাজ বিশ্বাবসুর বংশধরেরাই সেবক রূপে যুগ যুগ ধরে সেবা করবে। বিদ্যাপতির প্রথম স্ত্রীর সন্তানরা পূজারী হবে। আর বিদ্যাপতির দ্বিতীয়া স্ত্রী তথা বিশ্বাবসুর পুত্রী ললিতার সন্তানের বংশধরেরা ভোগ রান্নার দায়িত্ব নেবে।ব্রাহ্মণ ও শূদ্র জাতির একত্র মেলবন্ধন ঘটিয়ে ছিলেন স্বয়ং ভগবান। সে জন্যই পুরীতে জাতি বিচার নেই।

ইন্দ্রদুম্ন্য স্বপ্নে ভগবান বিষ্ণুর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রতিদিন মাত্র এক প্রহর মানে তিন ঘণ্টার জন্য মন্দিরের দ্বার বন্ধ থাকবে। বাকি সময় মন্দিরের দ্বার খোলা থাকবে। সারা দিন ভোজন চলবে। ভগবানের হাত কখনও শুকনো থাকবে না।ভগবান বিষ্ণু রাজার ভক্তির পরীক্ষা নিয়েছিলেন। নিজের জন্য কিছু প্রার্থনা করতে বলেছিলেন। রাজা নির্বংশ হওয়ার বর চেয়েছিলেন। যাতে তাঁর কোনো বংশধর দেবালয়কে নিজ সম্পত্তি বলে দাবি করতে না পারে। ভগবান তাই বর দিয়ে ছিলেন। জগন্নাথ মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। রথযাত্রার ইতিহাস এটাই ।




এখন বাংলা - খবরে থাকুন সবসময়
এখন বাংলা, পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র নির্ভীক পোর্টাল। আমরা আমাদের পাঠকদের কে সর্বদা সত্য খবর দিতে বধ্য পরিকর। স্থানীয়, রাজ্য, দেশ, দুনিয়া ও বিভিন্ন ধরনের খবর জানতে চোখ রাখুন এখন বাংলা ওয়েবসাইটে।
Source Open

(স্বভাবতই আপনি আপনার এলাকার নানান ঘটনার সাক্ষী, দেরি না করে শেয়ার করুন আমাদের সাথে।  ঘটনার বিবরণ দিন, ছবি এবং ভিডিয়ো থাকলে দিতে পারেন আমাদের ইমেলে , ekhonbanglaofficial@gmail.com ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আমাদের ওয়েবসাইটে যদি কোন রকম বিজ্ঞাপন দিতে চান তবে যোগাযোগ করুন  9476288780 এই নম্বরে, ধন্যবাদ।
নবীনতর পূর্বতন